আসসালামু আলাইকুম, আজ আমি ইসলাম শব্দের অর্থ কি এবং এর ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব, কারণ একটি মুসলিম জাতি হিসাবে আমাদের এর অর্থ জানা দরকার। সেজন্য আজ ইসলাম শব্দের অর্থ কি এই নিয়ে আলোচনা করব।
ইসলাম শব্দের অর্থ কি বা ইসলাম এর ব্যবহারিক অর্থ কি?
ইসলাম আরবী শব্দ; সালাম শব্দ হতে ইসলাম শব্দের উৎপত্তি; আরবী ভাষার অভিধান অনুযায়ী “ইসলাম” শব্দটির অর্থ হল “আত্মসমর্পণ করা”, “নিজেকে বিনয়াবনত করা”, “হুকুম মান্য করা”, “কোন আপত্তি ছাড়াই আদেশ-নিষেধ মেনে চলা”, “সর্বান্তকরণে কেবলমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের ইবাদত করা”। ,
তিনি যা বলেছেন তার সবকিছুই বিশ্বাস করা এবং তাঁর উপরেই বিশ্বাস এবং আস্থা রাখা। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য যে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন তার নামই হল “ইসলাম”।
ইসলাম এর পারিভাষিক সংজ্ঞা
পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে ইসলাম হল এক আল্লাহর বিধানের সামনে আত্মসমর্পণ করা; আর আত্মসমর্পণ হল দুইটি বিষয়ের সমন্বয়; যার একটি হল কথা অর্থাৎ তাওহীদের মৌখিক স্বীকৃতি এবং অপরটি হল কাজ অর্থাৎ কাজেকর্মে তাওহীদের বাস্তবায়ন।কথা অর্থাৎ মৌখিক স্বীকৃতি হচ্ছে ইসলামের মূল। এর মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। আর কাজ অর্থাৎ কাজেকর্মে তাওহীদের বাস্তবায়ন হচ্ছে ইসলামের শাখা; ইসলামে প্রবেশের পর এটি মান্য করে চলা অত্যন্ত জরুরি। তবে এটি মূল অংশ নয়; কাজেকর্মে কোন বিষয় অমান্য করলে অর্থাৎ আল্লাহর কোন আদেশ বা ফরয বিধান পালন না করলে, কোন নিষেধ বা হারাম কাজকে বর্জন না করলে ইসলাম ভঙ্গ হবে না যদি না তাতে শিরক হয়।
ইসলামের জন্য শর্ত হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান হচ্ছে তাওহীদের প্রতি অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস। ইসলাম একেবারে মূল্যহীন যদি ঈমান না থাকে। ঈমানবিহীন ইসলাম গ্রহণ কোন কাজে আসবে না। অর্থাৎ যদি অন্তরে তাওহীদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস না থাকে তবে ইসলাম অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়ন কোন কাজে আসবে না। যেমন কোন কাজে আসেনি মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই এর ইসলাম পালন, অন্তরে ঈমান না থাকার কারনে।
ইসলাম গ্রহণ করা হচ্ছে ঈমানের দাবী। আর ইসলাম হচ্ছে কথা এবং কাজ। অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই হচ্ছে ইসলাম। ঈমানের সাথে সাথে ইসলাম খুবই জরুরি। ইসলাম হচ্ছে ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। ঈমান অর্থাৎ অন্তরে বিশ্বাস একেবারে মূল্যহীন যদি না ইসলাম গ্রহণ করা হয়। শুধু ঈমান অর্থাৎ শুধু অন্তরে বিশ্বাস কোন কাজে আসবে না যদি না ইসলামকে গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি প্রদান এবং কাজে বাস্তবায়ন না করা হয়। যেমন সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর ঈমান কোন কাজে আসেনি ইসলামকে গ্রহণ না করার কারনে।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মতে, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশসমূহ মেনে চলাই হলো ইসলাম।”
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ইসলাম হলো আল্লহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, রমজান মাসের রোজা পালন করা এবং সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্জ আদায় করা।”
ইসলামের পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো- আল্লাহর অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা ও তার নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন করা। বিনা দ্বিধায় আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং তার দেওয়া বিধান অনুসারে জীবন যাপন করার নামই হলো ইসলাম।
আহমাদুর রহমান বলেছেন, “Islam is a complete surrender to Allah will and guidance.”
ঈমান ও ইসলাম
ঈমান এবং ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ঈমান ছাড়া যেমন ইসলাম মূল্যহীন তেমন ইসলাম ছাড়া ঈমান মূল্যহীন। একটি ছাড়া অপরটি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমান এবং ইসলাম এই দুটির সমন্বয়ই হচ্ছে ইবাদাত। অর্থাৎ তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই ইবাদাত। আর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। ইসলাম ছাড়া শুধু ঈমান ইবাদাত বলে গন্য হবে না আবার ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম ইবাদাত বলে গন্য হবে না। তাই আমাদেরকে তাওহীদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তারপর মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই সেটা ইবাদাত হিসাবে আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে।
কেন আমাদের ধর্মের নাম “ইসলাম” হল
আমরা দেখতে পাই যে পৃথিবীর তথাকথিত ধর্মগুলোর প্রত্যেকটির নামকরন হয়েছে হয় কোন বিশেষ ব্যক্তি না হয় কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর নাম অনুযায়ী।
“খ্রিসচিয়ানিটি” নামটি এসেছে “জিসাস ক্রাইস্ট” এর নাম থেকে; বুদ্ধাইজম বা “ বৌদ্ধ ধর্ম” নাম হয়েছে সেই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা “গৌতম বুদ্ধ” এর নাম অনুযায়ী; “জরথুসট্র” ধর্মের অনুসারীরা এই ধর্মের প্রবক্তা “জরথুসট্রের” নাম অনুযায়ী পরিচিত। ঠিক একই ভাবে “ইহুদী” ধর্মের নাম হয়েছে এই ধর্মের অনুসারীদের গোত্রীয় নাম “ইয়াহুদা” থেকে। বাকি ধর্মগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
তবে ইসলামের ব্যাপারটি একেবারেই ভিন্ন। কারণ ইসলাম কোন বিশেষ ব্যক্তি বা কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর ধর্ম নয়। বরং ইসলাম এমন এক জীবন ব্যবস্থার নাম যা “ইসলাম” শব্দের অর্থ থেকেই বুঝা যায়। “ইসলাম” নামটি থেকে যা বুঝা যায় তা হল এই জীবন ব্যবস্থা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি অথবা এটি কোন বিচ্ছিন্ন একটি জাতি বা গোষ্ঠীর ধর্ম নয়। বরং ইসলামের দাবী হল পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকেই “ইসলাম” বলতে যা বোঝায় তা মেনে চলবে এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন ঘটাবে। “ইসলাম” শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই যা বোঝায় তা যদি কেউ মেনে চলে তাহলে সে একজন মুসলিম। হোক সে ব্যক্তি বর্তমানের কেউ অথবা অতীতের কেউ অথবা ভবিষ্যতের কেউ। অর্থাৎ,ইসলাম-বলতে যা বোঝায় তা যে কেউ মেনে চললে সে বর্তমানে মুসলিম, কেউ অতীতে মেনে থাকলে সে মুসলিম ছিল এবং যে বা যারা ভবিষ্যতে মেনে চলবে তারাও হবে মুসলিম।
ইসলামের মূল ভিত্তি কাকে বলে
ইসলামের মূল ভিত্তি আর কেউ নয়, বরং এর মূল ভিত্তি হলো তাওহীদ। তাওহীদ অর্থ হলো একমাত্র আল্লাহের প্রভুত্বের বিশ্বাস এবং একমাত্র আল্লাহের উপর নির্ভর করা।ইসলামের সব আদর্শ ও আচারধারার সূচক এবং মূল ভিত্তি হলো আল্লাহের একমাত্র প্রভুত্বের বিশ্বাস এবং তাঁর উপর ভরসা করা।
ইসলামে প্রতিটি ধর্মীয় ও সামাজিক আদর্শ তাওহীদের আলোকে প্রকাশ পায়। এটি ইসলামের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি
ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলি পাঁচটি হলো:
- তাওহীদ (একমাত্র আল্লাহের প্রভুত্বের বিশ্বাস): ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো কেবলমাত্র একমাত্র আল্লাহ, প্রভু এবং সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করা। মুসলিমদের উপাস্য করা উচিত কেবলমাত্র আল্লাহ, এবং কোনো প্রকার সাহায্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
- রাসূলুল্লাহ (মুহাম্মদ সাঃ) এর প্রেরণা: মুহাম্মদ সাঃ ইসলামের প্রধান প্রকাশ করেন এবং তাঁর সাহস, প্রেম, দয়া এবং পরিপূর্ণ আচরণ মাধ্যমে মুসলিমদের প্রেরণা করেন।মুসলিমদের উপর তিনি প্রেরণা করেছেন এবং তাঁর সুন্দর আচরণ অনুসরণ করা উচিত।
- কোরআন (ইসলামের পবিত্র বই): কোরআন মুসলিমদের পবিত্র বই হিসেবে প্রচলিত এবং আল্লাহর প্রত্যক্ষ শব্দ বলে মান্য করা হয়। কোরআনে অন্যান্য ধর্মীয় নীতি, নীতিমালা এবং জীবন সম্পর্কিত নির্দেশিকা পাওয়া যায়।
- সালাত (নামায): সালাত ইসলামের প্রধান ইবাদত। মুসলিমদের নিয়মিতভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হয়, যার মাধ্যমে তাদের অবদান এবং অনুরাগ আল্লাহকে সামর্থ্য অর্জন করা হয়।
- জাকাত (জাকাত প্রদান): জাকাত ইসলামে প্রচলিত একটি আর্থিক সংগঠন যা দায়িত্বশীল মুসলিমদের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাকাত প্রাপ্য মানুষদের উপর আর্থিক দায়িত্ব ও দানের প্রত্যাশিত পরিমান প্রদান করা হয়।
ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব
ইসলামী শিক্ষা হলো ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন। কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, সাঁতার কাটতে হলে আপনাকে প্রথমে সাঁতার কী, কীভাবে সাঁতার কাটতে হয় ইত্যাদি শিখতে হবে। গাড়ি চালানোর জন্য আপনাকে গাড়ি এবং ড্রাইভিং সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। একইভাবে ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হলে আগে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর এর প্রধান মাধ্যম হলো ইসলামী শিক্ষা।
ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করতে শিখতে পারি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে চলাফেরা, উঠা-নামা করতে হয় তা জেনে। আপনি সততা, ন্যায়বিচার, দয়া, ক্ষমা, বিনয়, নম্রতা প্রভৃতি গুণাবলী অনুশীলন করতে পারেন। লোভ, হিংসা, মিথ্যা, অহংকার, পরনিন্দা ইত্যাদি বদ অভ্যাস পরিহার করে আমরা উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি। সাম্য, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা, সহনশীলতা, ধৈর্য, পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারি।
পরবর্তী জীবনে আমরা জান্নাতে পৌঁছানোর এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় জানতে পারব। এক কথায় ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও সফলতার দিকনির্দেশনা লাভ করতে পারি।