ফরজ গোসলের নিয়ম

আসলামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক গণ আজ কে আমি গোসল কি, ফরজ গোসলের নিয়ম, গোসলের দোয়া, ফরজ গোসলের নিয়ত, গোসল ফরজ হওয়ার কারণ, গোসলের ফরজ কাজ, ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নিয়ে যাক…

গোসল কি?

গোসল আরবি শব্দ। অঞ্চলভেদে একে অনেকে গোসল করা বললেও কেউ স্নান করা, নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। তবে আরবি গোসল শব্দের অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। আর ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধোয়াকে ‘গোসল’ বলা হয়।

মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি বিষয়ে ইসলামিক নিয়ম-কানুন রয়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে কোনোকিছুই ঠিকমতো আদায় হয় না। ফরজ গোসলেরও পদ্ধতি রয়েছে। সঠিক নিয়মে গোসল না করলে পবিত্রতা অর্জন হয় না। ফলে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় হয় না।

সুতরাং সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। ইসলামে পবিত্রতা অর্জন অনেক বড় বিষয়। কারণ আল্লাহ নিজেই পবিত্র, বান্দাদেরও পবিত্রতা পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— ‘তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের শরীর (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬)।

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে’ (সূরা বাকারা: ২২২)। মালিক আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অংশ। (মুসলিম: ২২৩)।

ফরজ গোসলের নিয়ম:

গোসলের ফরজ তিনটি।

  • কুলি করা (বুখারি: ২৫৭)
  • নাকে পানি দেওয়া (বুখারি: ২৬৫)
  • পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো (আবু দাউদ: ২১৭)

গোসলের দোয়া:

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতুয়ান গোছলা লিরাফিল জানাবা-তি।

ফরজ গোসলের নিয়ত:

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।

অর্থঃ

আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ:

সুনির্দিষ্ট চার কারণের যে কোনে একটি সংঘটিত হলেই গোসল ফরজ হয়। তাহলো-

  • জানাবাত থেকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা হওয়ার গোসল। এটি নারী-পুরুষের যৌন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন-
    وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ
    ‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)
  • মাসিক বন্ধ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
  • সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য নারীদের গোসল করা ফরজ।
  • আর জীবতদের জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।

গোসলের ফরজ কাজ:

উল্লেখিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে ৩টি কাজ করা ফরজ। যথাযথভাবে এ ৩ কাজ আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না। কাজ তিনটি হলো-

  • কুলি করা । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
  • নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
  • সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)

ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম:-

গোসলের আগে প্রস্রাব-পায়খানা সেরে নেবে। এতে বীর্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া সহজ হয়। প্রথমে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা ধুয়ে পরিষ্কার করবে।

  • বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।
  • হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
  • লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিস্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এতে নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।
  • নাপাকি ধোয়া। কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।
  • ওজু করা। পা ধোয়া ছাড়া নামাজের অজুর ন্যয় অজু করে নেওয়া।
  • অতঃপর ফরজ গোসলের তিন কাজ- কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।
  • পা ধোয়া। সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকের দাঁতে এমনভাবে ক্যাপ লাগানো হয়ে থাকে, যার দরুন কুলি করলে নিচে পানি পৌঁছে না এবং তা খুললেও ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে গোসলের সময় তা খোলা জরুরি নয়, আর যদি এমন কিছু লাগানো থাকে, যা সহজে খোলা যায়, তাহলে খুলে তার নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি। (রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪, আহসানুল ফাতাওয়া ২/৩২)

অবশেষে:

আল্লাহ তায়াআলা সকল মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে জানা এবং নামাজে মনোযোগী হওয়ার তাওফী দান করুন। আমাকে আড়ম্বর, অলসতা, অমনোযোগিতা থেকে মুক্তি দিন। আমিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *