দোয়া মাসুরা

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ। আজ আমি দোয়া মাসুরা সম্পর্কে আলোচনা করব। দোয়া মাসুরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা হয়। প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে দুরুদ শরিফ পাঠের পরই দোয়া মাসুরা পাঠ করতে হয়। তাশাহ্হুদের পর দরুদ পাঠ করা এবং এরপর দোয়া মাসুরা পাঠ করা সুন্নত। দোয়া মাসুরা শেষে সালাম ফেরাতে হয়।

এখানে পাঠের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। বরং একটি মাসনুন দোয়া পাঠ করলেই হয়। এমনকি একাধিক দোয়াও পাঠ করা যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘অতঃপর (দরুদ পাঠের পর) যে দোয়া ইচ্ছে, সেটা পাঠ করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০২)

প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ দোয়া মাসুরা

তবে আমরা সাধারণত যে দোয়া পড়ি, তা সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। আবু বকর (রা.)-এর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাসুল (সা.) তাকে শিখিয়ে ছিলেন। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.) কাছে আবেদন করলেন- আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন— যা আমি নামাজে পড়ব। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, এই দোয়া করো-

দোয়া মাসুরা আরবি

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

দোয়া মাসুরার বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা। ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।

দোয়া মাসুরার অর্থ

হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭০৫)

দোয়া মাসুরা কখন পড়তে হয়?

দোয়া মাসুরা সাধারণত নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু দরুদে ইব্রাহিম পড়ার পর দোয়া মাসুরা পড়তে হয়। নামাজে হাত বা নিয়ত বাধার পর সানা (সুবাহাকাল্লাহুম্মা) পড়তে হয়। তারপর সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়ে রুকুতে যেতে হয়।এরপর রুকুতে গিয়ে সুবহা-না রব্বিয়াল আজিম পড়তে হয়। তারপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হয়। তারপর রাব্বানা লাকাল হামদ পড়তে হয়। তারপর আবার সেজদায় যেতে হয়। সিজদায় সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা পড়তে হয়। এভাবে দুই সেজদার পড় উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধতে হয়। এভাবে দুই রাকাত নামাজ হলো দুই রাকাত আদায় করতে হয় তারপর দুই রাকাতে সিজদার পর আর উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাধতে হয় না তখন আত্তাহিয়াতু ও দরুদ ইবরাহিম তারপরে সালাম ফিরানোর আগে দোয়া মাসুরা পড়তে হয়।

দোয়া মাসুরা হিসেবে আরও যেসব দোয়া পড়া যায়

দোয়া মাসুরা হিসেবে পড়ার জন্য আরও দোয়া বর্ণিত হয়েছে হাদিস শরিফে। তার মধ্যে কয়েকটি হলো-

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল। ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মা‘ছামি ওয়াল মাগরাম।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিৎনা থেকে। আশ্রয় প্রার্থনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিৎন থেকে। হে আল্লাহ ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি গুনাহ ও ঋণ থেকে।’ (সহিহ বুখারি: ৮৩২; সহিহ মুসলিম: ৫৮৯)

উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখ্‌খারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লান্তু ওয়া মা আসরাফ্‌তু ওয়া মা আনতা আল’লামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দিন আমার গুনাহসমূহ— যা পূর্বে করেছি, যা পরে করেছি, যা আমি গোপনে করেছি, যা করেছি প্রকাশ্যে, যা সীমালঙ্ঘন করেছি, আর যা আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন। আপনিই (কাউকে) করেন অগ্রগামী, আর আপনিই (কাউকে) করেন পশ্চাদগামী, আপনি ব্যতীত আর কোনো সত্য ইলাহ নেই।’ (মুসলিম: ১/৫৩৪, নং ৭৭১)

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ও শুকরিকা ওয়াহুসনি ইবা-দাতিকা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার জিকির করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।’ (আবু দাউদ: ২/৮৬, নং ১৫২২; নাসায়ি: ৩/৫৩, নং ২৩০২)

উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াআউযু বিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া ও আজা-বিল ক্বাবরি)।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ ! আমি আপনার আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই কাপুরুষতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই চরম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আর আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে।’ (বুখারি, (ফাতহুল বারিসহ) ৬/৩৫, নং ২৮২২, ৬৩৯০)

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজু বিকা মিনান্না-র।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ: ৭৯২; ইবনে মাজাহ: ৯১০)

দোয়া মাসুরা পড়ার ফজিলত

দোয়া মাসুরার পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। এই দোয়াটি মোনাজাতের সময়ও পাঠ করা যায়। এই দোয়াটি একই সঙ্গে আল্লাহর কাছে তওবা ও সাহায্য কামনায় একটি অত্যন্ত ফজিলতময় দোয়া। তাই এই দোয়াটি নামাজের মধ্যে পাঠ করা হয়।

নিজের ভাষায় দোয়া মাসুরা পড়া যাবে?

মনে রাখতে হবে, নামাজের মধ্যে নিজের ভাষায় দোয়া করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পড়া যাবে না। শুধুমাত্র কোরআন-সুন্নাহে বর্ণিত দোয়া পড়তে হবে। কেননা রাসূল (সা.) মানুষের ভাষাকে নামাজে ব্যবহার করাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এ নামাজে মানুষের কথাবার্তার মতো কথা বলা উচিত নয়। নিশ্চয়ই এটি তাসবীহ, তাকবীর এবং কোরআন তেলাওয়াতের স্থান।’ (সহীহ মুসলিম: ৫৩৭)

সুতরাং কোরআন-হাদীসে বর্ণিত যেকোনো কল্যাণ বা ক্ষমা প্রার্থনামূলক দোয়া পড়লেই হবে। তবে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী জলামতু নাফসী…’ এই দোয়াটি অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাই এটি পড়াও উত্তম। (শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ১/৬৩৬; ফাতহুল কাদীর: ১/২৭৭; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/৫৬; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *