ইস্তেখারার দোয়া

আসসালামু আলাইকুম, আজ আমরা আলোচনা করব ইস্তেখারার দোয়া (Istighfar Dua) সম্পর্কে এবং এর ফজিলত সম্পর্কে, কারণ এই দোয়াটি আমরা মুসলিম জাতি হিসাবে এর অর্থ বা তাৎপর্য আমাদের সবার জানা অতিব দরকার। তাই আজ আমরা ইস্তেখারার দোয়া নিয়ে আলোচনা করব।

ইস্তেখারা শব্দের অর্থ

ইস্তেখারা আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ, কোনও জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করা। আপনার যদি কোনও কাজ করার ইচ্ছা হয় কাজটি আপনার জন্য কল্যাণকর নাকি বিপদজনক এ বিষয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়াকেই ইস্তেখারা বলে।

এ পরামর্শটিকেই সালাতুল ইস্তেখারা বলে। আল্লাহর নিকট কোনও জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করা। কোনও কিছু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে এই নামাজ পড়া হয়। এ নামাজ খুব নিয়ামতপূর্ণ ও ইফেক্টিভ। ইসলামের সূচনা থেকেই এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছে মানুষ।

কোনও কাজে ভালো মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে ঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত বা লাভ-লোকসানের দ্বন্দ্ব হলে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করতে হবে।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ ، وَأَسْتَعِينُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ () خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي ، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ

উচ্চারণ

আল্লা-হুম্মা ইবি আস্‌তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্‌তাক্‌দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্‌দিরু অলা আক্‌দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা ( ) খাইরুল লি লি দীনি অ মাআশি অ আকিবাতি আমরি অ আ-জিলিহি অ আ-জিলিহ, ফাক্‌দুরহু লি, অ য়্যাসসিরহু লি, সুম্মা বা-রিক লি ফিহ। অ ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লি ফি দীনি অ মাআশি অ আ’-কিবাতি আমরি অ আ’-জিলিহি অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নি অস্বরিফনি আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনি বিহ।

অর্থ

হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই ( ) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। তাতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।

প্রথমে (هَذَا الأَمْرَ) ‘হা-জাল আমরা এর স্থলে বা পরে কাজের নাম নিতে হবে অথবা মনে মনে সেই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করতে হবে।

সে ব্যক্তি কর্মে কোনদিন লাঞ্ছিত হয় না, যে আল্লাহর নিকট তাতে মঙ্গল প্রার্থনা করে, অভিজ্ঞদের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করে, ভালো-মন্দ বিচার করার পর কর্ম করে। (বুখারি ৭/ ১৬২, আবু দাউদ ২/৮৯, তিরমিজি ২/৩৫৫, আহমাদ ৩/৩৪৪)।

ইস্তেখারার নামাজ

ইস্তেখারার নামাজের নিয়ম, দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তারপর নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা করবে অর্থাৎ আল্লাহর হামদ পড়বে তারপর রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পড়বে। তারপর ইস্তেখারার দোয়া পড়বে।

ইস্তেখারার দোয়া শর্ত

  • নিয়্যাত করা (মনে মনে)।
  • প্রয়োজনীয় সকল চেষ্টা করা। অর্থাৎ ওয়াসিলা গ্রহণ করা।
  • আল্লাহর হুকুমে খুশী থাকা।
  • শুধু হালাল কিংবা বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারার দোয়া করা।
  • তাওবা করা, অন্যায় করে কিছু গ্রহণ না করা, হারাম উপার্জন না করা, হারাম মাল ভক্ষণ না করা।
  • যে সব বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে অর্থাৎ বিষয়টি তার ইচ্ছার অধীনে সেসব বিষয়ে ইস্তেখারার দোয়া না করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *