ইবাদত কাকে বলে

আসলামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক গণ আজ কে আমি ইবাদাত কি, ইবাদতের গুরুত্ব, ইবাদত কাকে বলে, ইবাদতের ধাপ, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নিয়ে যাক..

ইবাদাত কি:

ইবাদত অর্থ কি: ইবাদত আরবী শব্দ; আরবী ভাষার শব্দ হলেও সকল ভাষাভাষী মুসলিমের কাছেই এটি অতীব পরিচিত; এটি একটি প্রসিদ্ধ ইসলামী পরিভাষা; আল কোরআনে এ শব্দটি বিভিন্নভাবে মোট ২৭৬ বার উল্লেখিত হয়েছে।

ইবাদাত (عبادات) হলো ইবাদাহ এর বহুবচন। ইবাদাহ একাধিক অর্থ থাকলেও এটি ইসলামে উপাসনা পরিচালনার বিধি বা সমস্ত মুসলমানের নির্ধারিত বয়সের পরে ধর্মীয় উপাসনা কর্তব্য সম্পর্কে ইসলামী আইনশাস্ত্র (ফিকাহ) মেনে তাদের দেহ ও মন পরিচালিত কার। ইসলাম ধর্মে ইবাদত এর পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে।

আরবী মাবুদ শব্দটি ইবাদাত ধাতু থেকে কর্মবাচক বিশেষ্য; এর অর্থ যার ইবাদাত করা হয়। এখান থেকেই আব্দ শব্দটি দাস বা গোলাম অর্থে ব্যবহৃত হয়; কেননা আব্দ যা করে তাই ইবাদাত; মহান আল্লাহ হলেন আমাদের মাবুদ; আর আমরা হলাম তার গোলাম।

ইবাদতের গুরুত্ব:

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। মহান আল্লাহ বলেন,আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সুরা যারিয়াত: আয়াত—৫৬)

এ আয়াতে আমরা এটা বুঝতে পারছি যে, আল্লাহ চান যে, তার সৃষ্টি মানুষ ও জ্বিন যেন তার একত্ববাদকে মান্য করে চলে, কোন অবস্থাতেই যেন তারা তার সাথে শরিক স্থাপন না করে।

উল্লেখ্য যে, মানুষ ও জ্বিনদের কিছু অংশ ছাড়া বাকি সব সৃষ্টিই আল্লাহর ইবাদাত করে; সবাই মুসলিম অর্থাৎ সবকিছুই আল্লাহর একত্ববাদকে মান্য করে চলে।

মহান আল্লাহ বলেন, আমরা শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থণা করি। (সুরা ফাতিহা: আয়াত নং – ৪)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, শুধু তারই ইবাদাত করতে হবে অর্থাৎ তার একত্ববাদকে মেনে চলতে হবে সকল ক্ষেত্রে এবং তিনি এও শিক্ষা দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র তার নিকটেই চাইতে হবে।

মহান আল্লাহ আরো বলেন:

হে মানুষ তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।

ইবাদত কাকে বলে:

ইবাদতের পরিচয় দিতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (র:) বলেন,

ইবাদাত হচ্ছে রাসুলগণের মাধ্যমে আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন তা মেনে চলা। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ যা ভালবাসেন ও পসন্দ করেন এমন সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় কাজ ও কথার নাম ইবাদাত।

ইমাম কুরতুবী (র:) বলেন,

ইবাদাত হলো মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেওয়া এবং তার দ্বীনের বিধান সমূহের অনুসরণ করা, আর ইবাদাতের মূল হলো বিনয় এবং নিজেকে তুচ্ছ করে প্রকাশ করা।

আল্লামা ইবনে কাসির (র:) বলেন,

ইবাদাতের শাব্দিক অর্থ হল নমনীয়তা। আর পারিভাষিক অর্থে ইবাদাত বলা হয় পরিপূর্ণ ভীতি, বিনয় ও ভালবাসার সমষ্টিকে।

আবুল আলা মওদূদী (র:) বলেন,

ইবাদাতের মূল কথা হল কোন সত্ত্বার বড়ত্বকে মাথা পেতে নেয়া। অতঃপর তার সামনে নিজের স্বাধীনতাকে বিলীন করে দেয়া। অর্থাৎ তার আনুগত্যকে বরণ করে নেয়া।

আমরা এতক্ষণ বিভিন্ন মনিষীর দেয়া ইবাদতের সংজ্ঞা সম্পর্কে জানলাম। আসলে সবচেয়ে সহজ ও সঠিক সংজ্ঞা হল এই যে, তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার নামই ইবাদাত। অতএব ইবাদাতকে ভালভাবে বুঝতে হলে তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদকে জানতে হবে। তাই প্রথমে আমাদেরকে আল্লাহর পরিচয় ভালভাবে জানতে হবে। তিনি আমাদেরকে কুরআন ও সহিহ হাদিসের মাধ্যমে তার নিজের নাম ও গুণাবলী সমূহের যে বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন সেটাই আল্লাহর পরিচয়। সেখানেই তাওহীদের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা বিদ্যমান রয়েছে। তাওহীদ সম্পর্কে জানতে হলে তাওহীদ সম্পর্কিত আমার আর্টিকেলসমূহ যেমন তাওহীদের পরিচয়, আল্লাহর পরিচয় পড়তে পারেন।

ইবাদতের ধাপ:

ইবাদাতের ধাপ দুইটি বা এভাবে বলা যায় যে, ইবাদাত দুইটি অংশে বিভক্ত। এর প্রথম এবং মূল অংশ হচ্ছে ঈমান। আর অপরটি হল ইসলাম। ঈমান অর্থ হচ্ছে অন্তরে বিশ্বাস। ব্যাপক অর্থে তাওহীদের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সে সকল বিষয়ের প্রতি অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার নামই হচ্ছে ঈমান। আর ইসলাম হচ্ছে দুইটি বিষয়ের সমন্বয়। আর তা হল কথা এবং কাজ। কথা বলতে শাহাদাতাইন বা তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়াকে বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (স:) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল এই বাক্য উচ্চারণ করা। আর কাজ বলতে তাওহীদের ভেতরের যাবতীয় বিষয় কাজে পরিণত করা। বিশেষভাবে সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্ব এই চারটি বিষয়ের নির্দেশ ভালভাবে মান্য করা। অতএব, আমরা বুঝতে পারলাম যে, তাওহীদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া ও কাজে পরিণত করার নামই হচ্ছে ইবাদাত।

অবশেষে:

আল্লাহ তায়াআলা সকল মুসলিম উম্মাহকে ইবাদাত ও নামাজে মনোযোগী হওয়ার তাওফী দান করুন। আমাকে আড়ম্বর, অলসতা, অমনোযোগিতা থেকে মুক্তি দিন। আমিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *