আজ আমি আলোচনা করব সালামের উত্তর (Salamer Uttor) নিয়ে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর সঠিক দিক নির্দেশনা কি ? তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
সালাম আদান-প্রদানকে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম বলা হয়। হাদিসে সালাম আদান-প্রদানের জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কী আছে এই সালামে? কেন সালামের ব্যাপক আদান-প্রদানের কথা বলেছেন বিশ্বনবি? সালাম বিনিময়ের ফজিলত ও মর্যাদা কী?
মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি উত্তম উপায় পরস্পর সালাম আদান-প্রদান। এর মাধ্যমে পরস্পর একে অপরের জন্য দোয়া করেন এবং প্রীতিময় সুন্দর সুসম্পর্ক ও মনের মিল তৈরি হয়। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি বর্ণনা করে বলেন-
“যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা (উত্তরে) উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।” (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। তবে এই সালামের মধ্যে অপর ভাইয়ের শান্তির জন্য দোয়া ও শুভাকাঙ্ক্ষার মনোভাব থাকতে হবে।’
সালাম কি?
সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। সালাম (سَلَام) একটি আরবি শব্দ যার অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। ইসলামে একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক অভিবাদন হলো ‘সালাম’। তাই কারো সাথে দেখা হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। তিনি বলেছেন, ‘কথা বলার আগে সালাম দাও।’
আসসালামু আলাইকুম (اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ) অর্থাৎ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব তথা অবশ্যক করণীয়।
প্রথম সালামের প্রচলন
আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালামকে সালাম দেওয়ার শিক্ষা দেন। হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাদের তাঁকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি ফেরেশতাদের সালাম দিলে তারাও সালামের উত্তর দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ যে ফেরেশতামণ্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরাও তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাকুম’। তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশি বললেন।’ (রিয়াদুস সালেহিন)
সালাম দেয়ার পদ্ধতি ও ফজিলত
হাদিসের নির্দেশনা হলো- একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা-বার্তার আগে সালাম দিতে হবে। সালাম দেয়ার ফজিলত অনেক বেশি। সালাম দেয়া সুন্নাত এবং সালামের উত্তর (Salamer Uttor)দেয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-
– হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সর্বাধিক কাছাকাছি মানুষ ওই ব্যক্তি; যে সর্বপ্রথম সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহামদ)
– একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা ‘। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মেশকাত)
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দুই জন মুসলমানের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হাতে হাত মেলায়) করে তখন একজন অপরজন থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’
– হজরত আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) খাবার দান কর, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখ এবং লোকেরা যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামাজ পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দরেমি)
সালামের নির্দেশ
সালাম ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিয়াকে পরস্পর সাক্ষাতে ব্যাপকভাবে সালাম প্রসারের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে-
– হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কী? তিনি বললেন, ‘(ক্ষুধার্তকে) খাবার দান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’ (মেশকাত, রিয়াদুস সালেহিন)
– হজরত আবু উমারা বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাতটি (কাজ করতে) আদেশ করেছেন-
- রোগী দেখতে যাওয়া;
- জানাজার অনুসরণ করা;
- হাঁচির (ছিঁকের) জবাব দেয়া;
- দুর্বলকে সাহায্য করা;
- নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা
- সালাম প্রচার করা; এবং
- শপথকারীর শপথ পুরা করা।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহামদ)
- এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক।
মুমিন মুসলমানের উচিত, পরস্পরের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটানো। কুরআনে শেখানো পদ্ধতি ও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা মোতাবেক সালাম আদান প্রদান করা। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও বরকত লাভ করা।