আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক – পাঠিকা , আজ আমি আলোচনা করবো নামাজের নিয়ম (namaz rakat) সম্পর্কে কারণ আমরা মুসলিম জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উপর নামাজ ফরজ কিন্তু এই ফরজ আদায় করতে গিয়ে অনেকেই ভুল করে থাকি। তার কারণ , নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমরা খুব একটা ভালোভাবে অবগত নই। তাই আজকে আজকে আপনাদেরকে নামাজের নিয়ম (namaz rakat) সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পোস্টটি করা , আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
নামাজ ফারসি শব্দ। আরবিতে একে সালাত বলা হয়। নামাজ বা সালাত যা-ই বলি, ইসলামি পরিভাষায় সেটা মূলত বোঝায় আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত নিয়মে প্রতিদিন পাঁচ বার ইবাদত করার একটি পদ্ধতি। এটি একটি ফরজ ইবাদত। ফলে মুসলিমদেরকে প্রতিদিনই পাঁচ বার নামাজ আদায় করতেই হবে। নামাজকে মুসলিমদের মিরাজ বলা হয়। কেননা নামাজের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহ তা’আলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়। নামাজের গুরুত্ব বলা শুরু করলে শেষ হবে না। মুসলিম হিসেবে নামাজের ফরজ কতগুলি, নামাজের নিয়ম কী, কোন নামাজ কত রাকাত ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর জানা অবশ্য কর্তব্য।
নামাজ পড়ার গুরুত্ব
নামাজকে বলা হয় জান্নাতের চাবির মতো। শুধু যে পরকালিন সমৃদ্ধি রয়েছে নামাজ পড়াতে, তা কিন্তু নয়। স্বেচ্ছায় ও মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়লে বান্দার মনে সবসময় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের প্রতি সচেতনতা থাকে। ফলে একজন প্রকৃত নামাজি ব্যক্তি সর্বদাই নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং ভালো কাজ করতে চেষ্টা করেন।
ইসলামের ৫টি স্তম্ভ আছে। যার মধ্যে একটি হলো, নামাজ। তাই নামাজ ছাড়া ইসলাম কল্পনা করা যায় না। এজন্যই নামাজ সঠিকভাবে আদায় করা জরুরি। সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের নিয়ম জানা, কোন নামাজ কত রাকাত জানা ইত্যাদি।
নামাজের নিয়ম (Namaz Rakat)
নামাজ পড়ার নিয়ম (namaz rakat) -এর ক্ষেত্রে মাযহাবভিত্তিক কিছু মত পার্থক্য আছে। তবে প্রত্যেক মাযহাবের নিয়মই গ্রহণযোগ্য। এই লেখায় আমি শুধুমাত্র হানাফী মাযহাবের নিয়ম বর্ণনা করব। কারণ আমাদের দেশ এবং এই উপমহাদেশের বেশিরভাগ মানুষ হানাফী মাযহাবের অনুসারী। এখানে কোন নামাজ কত রাকাত জানা যাবে। নিচে কোন নামাজ কত রাকাত সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আগে নামাজের নিয়মগুলো জেনে নিন। এখানে পুরো নিয়ম সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়া হলো।
- প্রথমে সঠিক নিয়মে অজু করে নামাজের প্রস্তুতি নিন।
- এরপর নামাজের নিয়ত করতে হবে। এটা মুখে বা মনে মনে বলা বাধ্যতামূলক না। আমরা যে নামাজের জন্য দাঁড়াচ্ছি, এটাই নিয়ত হিসেবে প্রতীয়মান হবে।
- এরপর তাকবীর দিয়ে হাত বাঁধুন। প্রচলিত অনেক নিয়ম আছে। তবে, সবচেয়ে বেশি প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বাম হাতের উপর ডান হাত রাখুন।
- নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরজ। তবে, গুরুতর সমস্যা থাকলে বসে বা শুয়েও আদায় করা যায়। কিন্তু সমস্যা গুরুতর না হলে, কোনভাবেই বসে বা শুয়ে আদায় করা যাবে না।
- এরপর বলুন (বাংলা উচ্চারণ): ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’ [নাসাঈ, হাদিস: ৮৮৯]
- এরপর পড়ুন: ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ [তাহাবি: ১/৩৪৭]
- তারপর পড়ুন: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। [তাহাবি: ১/৩৪৭]
- এবার সুরা ফাতিহা পড়ুন।
- সুরা ফাতিহা শেষ হলে একটি সুরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়ুন। [আবু দাউদ, হাদিস: ৬৯৫]
- অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করুন। [আবু দাউদ, হাদিস: ৭২৯]
- রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরুন। [মুজামে সাগির: ২/৪৯৭]
- রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়ুন। [তিরমিজি, হাদিস : ২৪২]
- এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। এরপর তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। [সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৭৪৭]
- সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে কপাল মাটিতে রাখুন। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখুন। [বুখারি, হাদিস: ৭৮৫]
- সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়ুন। [তিরমিজি, হাদিস: ২৪২]
- এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়ুন।
- এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করুন।
- দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়ুন। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও পড়া যাবে।
- তারপর ভূমিতে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যান।
এ পর্যন্ত প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলো।
- এখন আবার প্রথম রাকাতের মত শুরু করুন। এক্ষেত্রে হাত উঠাবেন না, ছানাও পড়বেন না এবং আউজুবিল্লাহও পড়বেন না।
- আগের মতো সুরা ফাতিহা ও সঙ্গে অন্য একটি সুরা পড়ে রুকু-সিজদা করবেন।
- তবে, এখানে একটি বাড়তি কাজ করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যাবেন। তখন আপনার হাত থাকবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। [মুসলিম, হাদিস: ৯১২]
- অতঃপর নিম্নের তাশাহহুদ পড়বেন। বাংলা উচ্চারণ: ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৮৮]
- তাশাহহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করবেন। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলবেন। তবে তাশাহহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মও ইমামদের বক্তব্যে দেখা যায়।
এভাবে আপনার ২ রাকাত নামাজ আদায় হয়ে গেল। এখন নামাজ যদি ২ রাকাত বিশিষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে এখন শেষ করার জন্য কিছু কাজ করতে হবে। নতুবা, ৩ ও ৪ রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে একই নিয়মে ৩য় ও ৪র্থ রাকাত আদায় করতে হবে। যে রাকাত শেষ রাকাত হবে, সে রাকাতে উপরের নিয়মে সিজদার পর তাশাহুদ পড়তে হবে।
আর, বলেছিলাম সকল রাকাত শেষে, তাশাহুদ পড়ার পর আরও কিছু কাজ করতে হবে। নামাজ শেষের পূর্বের কিছু কাজ:
- এখন দরুদ শরিফ পাঠ করবেন। দরুদ শরিফের বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’ [মুসলিম, হাদিস: ৬১৩]
- এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পাঠ করবেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮] সাধারণত আমরা দোয়ায়ে মাসুরা পড়ি। দোয়ায়ে মাসুরার বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৯]
- এরপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে ও বামে মাথা ঘোরাবেন এবং দুবারই সালাম দেবেন। সালাম ফেরানোর সময় আপনার পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন।
এভাবেই ২, ৩ ও ৪ রাকাত বিশিষ্ট বিভিন্ন নামাজ আদায় করবেন।
অসুস্থ অবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম
ইসলামে প্রতিদিন নামাজ পড়া ফরজ। না পড়লে কবিরা গুনাহ্ হবে এবং আখিরাতে এজন্য কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু আপনি যদি অসুস্থ হন এবং নামাজ পড়ার মতো অবস্থা না থাকে, তখন কি করবেন?
আপনি চাইলে বসে বা শুয়েও নামাজ আদায় করতে পারবেন। এটা শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্য। ইসলামের বিধিবিধান সার্বজনীন, তাই সবার জন্যই ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, এখানে শর্ত হলো, আপনি দাঁড়াতে একেবারেই অক্ষম হতে হবে। সেক্ষেত্রে বসার মতো অবস্থা থাকলে বসেই পড়তে হবে।
আবার যদি এমন হয় যে, দাঁড়ানো বা বসার মতো সামর্থ্য নেই, তখন আপনি শুয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। ইচ্ছাকৃত আলসেমি করে বসে বা শুয়ে নামাজ পড়া যাবে না।
যদি অসহনীয় বা অস্বাভাবিক ব্যথা না থাকে, অর্থাৎ সামান্য ব্যথা অনুভব হয়, তাহলে সেটা শরিয়তের দৃষ্টিতে শারীরিক অক্ষমতা বলে বিবেচিত হবে না। এমতাবস্থায় বসে বা শুয়ে নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই। এখানে এ বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা করব।
বসে নামাজ পড়ার নিয়ম
আগেও বলেছি, ইসলাম কারও সাধ্যের চেয়ে বেশি কাজ চাপিয়ে দেয় না। তাই, কেউ দাঁড়াতে অপারগ হলে বসে সালাত আদায় করতে পারবেন। তবে, এক্ষেত্রে এটুকু নিশ্চিত হতে হবে যে, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে একদমই সক্ষম নন কেউ।
এক্ষেত্রে নামাজের সকল নিয়ম আগের মতোই হবে। কিছুটা পার্থক্য থাকবে বটে। দাঁড়ানোর বদলে বসে আদায় করবেন। এক্ষেত্রে রুকুতে কিছুটা ঝুঁকবেন এবং সিজদাতে অনেকটাই ঝুঁকবেন এবং মাথাও নামাবেন (যতটা সম্ভব)। [দুররে মুখতার : ২/৫৬৬]
চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়ার নিয়ম
কেউ যদি বসে নামাজ আদায় করতে গিয়ে সরাসরি কোথাও বসার সুযোগ না পায় এবং চেয়ারের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে চেয়ারে নামাজ আদায় করতে পারবেন। কিন্তু যদি সমতল ভূমিতে বসে সালাত আদায় করার মতো অবস্থা থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে সালাত আদায় করা জায়েজ হবে না।
চেয়ারেও নামাজ পড়া যাবে, বসে নামাজ পড়ার নিয়মেই। [দুররে মুখতার: ২/৫৬৬]
শুয়ে ইশারায় নামাজ পড়ার নিয়ম
শুয়ে নামাজ পড়ার পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ।
- যখন অনেক অসুস্থ হওয়ায় শুয়ে থাকতে হয় এবং কোনোভাবেই দাঁড়াতে বা বসতে পারছেন না কিছুটা সময়, তখন আপনি শুয়ে নামাজ আদায় করবেন।
- এভাবে সালাতের জন্য প্রথমে নিয়ত করবেন। এরপর কিয়ামের কাজ করবেন। যতটুকু পারেন মাথা নুয়ে রুকু করবেন। আরেকটু অধিক পরিমাণ নুয়ে সিজদা করবেন। অর্থাৎ যতটুকু আপনার দ্বারা সম্ভব ততটা করে আপনি সালাত শেষ করবেন।
- এ ক্ষেত্রে আপনার মুখ থাকবে কেবলা অর্থাৎ পশ্চিম দিকে। তবে এখানেও কথা আছে, যদি আপনার মুখ কেবলার দিকে ফেরানোও সম্ভব না হয় তাহলেও সালাত হয়ে যাবে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অর্থাৎ, পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর।
নামাজের ফরজ কয়টি?
নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী সেটা নিয়েই এই অংশটি। মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জানা জরুরি নামাজের ফরজ কয়টি। কেননা আমরা যদি না জানি যে, নামাজের ফরজ কয়টি তাহলে নামাজে ভুল হয়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে নামাজের ফরজ কয়টি না জানা থাকার ফলে নামাজই বাতিল হয়ে যায়। এখানে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো:
নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ
- শরীর পবিত্র হওয়া। [সুরা মায়িদা, আয়াত ৬; তিরমিজি, হাদিস: ১, ৩ (হাসান)]
- কাপড় পবিত্র হওয়া। [সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪; তিরমিজি, হাদিস: ১, ৩ (হাসান)]
- নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫; তিরমিজি, হাদিস: ১, ৩ (হাসান)]
- সতর ঢাকা (অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা। মনে রাখা আবশ্যক, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত)। [সুরা আরাফ, আয়াত ৩১; সুরা নূর, আয়াত ৩১; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬ (হাসান), মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৭৫৬ (হাসান), তিরমিজি ১/২২২, হাদিস: ১১৭৩, ৩৭৭ (সহিহ), আবু দাউদ ১/৯৪, হাদিস: ৬৪১ (সহিহ), ২/৫৬৭, হাদিস: ৪১০৪ (গ্রহণযোগ্য), মারাসিলে আবি দাউদ ৮৬, হাদিস: ২৮ (গ্রহণযোগ্য)]
- কিবলামুখী হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস: ৬২৫১]
- ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া। [সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩; বুখারি ১/৭৫, হাদিস: ৫২১]
- অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। [বুখারি ১/২, হাদিস: ১]
নামাজের ভেতরে ৬টি ফরজ
- তাকবিরে তাহরিমা, অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা। [সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩; বুখারি ১/১০১, হাদিস: ৮৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস: ৪১১, ৪১২, তিরমিজি ১/৫৫, হাদিস : ২৩৮]
- ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ২৩৮; বুখারি ১/১৫০, হাদিস: ১১১৭, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস: ৩০৪ (হাদিসটি সহিহ)]
- কিরাত পড়া (অর্থাৎ কোরআন শরিফ থেকে ন্যূনতম ছোট এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরজ)। [সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস: ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস: ৩০২, ৩০৩ (হাদিসটি সহিহ)]
- রুকু করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস: ৪১২]
- দুই সিজদা করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১০১, হাদিস: ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস: ৪১১]
- শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা) [আবু দাউদ ১/১৩৯, হাদিস: ৯৭০ (সহিহ)]
বি. দ্র: নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন: সালাম ফেরানো ইত্যাদি) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ। [আল বাহরুর রায়িক, ১:৫১৩]
নামাজের সতর্কতা
নামাজের কোনো ফরজ বাদ পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহিহ হয় না। [আল বাহরুর রায়িক, ১:৫০৫) ফাতাওয়া শামি, ১ : ৪৪৭, হিদায়া, ১:৯৮]
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কত রাকাত
নামাজ ফরজ ইবাদত হলেও, সম্পূর্ণ নামাজ ফরজ নয়। নামাজের অনেক অংশ থাকে। কিছু অংশ ফরজ, কিছু অংশ সুন্নত এবং কিছু অংশ ওয়াজিব। তাই কোন নামাজ কত রাকাত, সেটা জানা জরুরি। এর মধ্যে ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ অবশ্যই পড়তে হবে। কিন্তু সুন্নতে যায়িদাহের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় আছে। তাই, এখানে রাকাতের আলোচনায় শুধু ফরজ, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ ও ওয়াজিবের আলোচনা করা হবে। [তিরমিজি, হাদিস: ৬৩৬২] নিচে ৫ ওয়াক্ত নামাজের কোন নামাজ কত রাকাত তার তালিকা দেওয়া হলো:
ফজর
ফজরের নামাজ মোট ৪ রাকাত। যথা:
ফরজ: ২ রাকাত
সুন্নত: ২ রাকাত
[মুসলিম, হাদিস: ১৪৫৬, ৯৬৬]
জোহর
যোহরের নামাজ মোট ১০ রাকাত। যথা:
সুন্নত: ৪ রাকাত
ফরজ: ৪ রাকাত
সুন্নত: ২ রাকাত
[সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর: ৭১৭, ৫০৬, মুসলিম, হাদিস: ৯৬৯]
আসর
আসরের নামাজ মোট ৪ রাকাত। যথা:
ফরজ: ৪ রাকাত
[সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১৭, ৫৪৫]
মাগরিব
মাগরিবের নামাজ মোট ৫ রাকাত। যথা:
ফরজ: ৩ রাকাত
সুন্নত: ২ রাকাত
[মুসলিম, হাদিস: ৯৬৯, দারা কুতনি, হাদিস: ১০৬৬]
এশা
এশার নামাজ মোট ৯ রাকাত। যথা:
ফরজ: ৪ রাকাত
সুন্নত: ২ রাকাত
বিতর: ৩ রাকাত
[মুসলিম, হাদিস: ৯৬৯, বুখারি, হাদিস: ৫০৮, ৫৩৮, ৯৬৯]
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সঠিকভাবে নামাজ পড়ার কোন বিকল্প নেই। আশা করি এই লেখার মাধ্যমে নামাজের নিয়মগুলি নিয়ে বেশ ভালো ধারণা তৈরি হয়েছে। সঠিকভাবে নিজে নামাজ আদায় করুন এবং অন্যকেও করতে সাহায্য করুন। বন্ধুদের সাথে এই লেখাটি শেয়ার করুন। তাহলে তারাও একদিকে উপকৃত হবে এবং আপনার কারণে কেউ যদি সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের সুযোগ পায়, তার অংশীদারও আপনি হবেন অবশ্যই!