আসসালামু আলাইকুম। আজ আমি সূরা কাফিরুন সম্পর্কে আলোচনা করব এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বলব। কারণ আমরা মুসলিম জাতি হিসেবে এই সূরার অর্থ বা তাৎপর্য সবার জানা দরকার। তাই আজ আমি সূরা কাফিরুন নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক
সুরা আল কাফিরুন (আরবি: سورة الكافرون) পবিত্র কুরআনের ১০৯তম সুরা। সুরাটির আয়াত সংখ্যা ৬। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়, তাই এটি মাক্কী সুরার শ্রেণীভুক্ত। মুসলিম জীবনে এই সুরার তাৎপর্য অনেক। কারণ এই সুরার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও এই সুরাটি গোটা মুসলিম জাতির জন্য একটি উদাহরণস্বরূপ যে, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা শত্রুর সঙ্গে আপসে যাবে না, যা ইসলাম সমর্থন করে না।
আয়াতসমূহ
আরবি ভাষায় | উচ্চারণ | বাংলায় অনুবাদ |
---|---|---|
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম | ||
قُلۡ یٰۤاَیُّهَا الۡکٰفِرُوۡنَ لَاۤ اَعۡبُدُ مَا تَعۡبُدُوۡنَ لَاۤ اَنۡتُمۡ عٰبِدُوۡنَ مَاۤ اَعۡبُد وَ لَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدۡتُّمۡ ۙ لَاۤ اَنۡتُمۡ عٰبِدُوۡنَ مَاۤ اَعۡبُدُ ؕ لَکُمۡ دِیۡنُکُمۡ وَلِیَ دِیۡنِ |
ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন।
লা আ’বুদু মা তা’বুদূন। ওয়ালা আনতুম আ’বিদুনা মা আ’বূদ। ওয়ালা আনা আ’বিদুম্মা আবাত্তুম। ওয়ালা আনতুম আ’বিদুনা মা আ’বুদ। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন। |
বলঃ হে কাফিরেরা,
আমি তার ইবাদাত করিনা যার ইবাদাত তোমরা কর, এবং তোমরাও তাঁর ইবাদাতকারী নও যাঁর ইবাদাত আমি করি, এবং আমি ইবাদাতকারী নই তার যার ইবাদাত তোমরা করে আসছ, এবং তোমরা যার ‘ইবাদত করছ আমি তার ‘ইবাদাতকারী হব না’। তোমাদের জন্য তোমাদের দীন এবং আমার জন্য আমার দীন। |
সারাংশ
সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৬। নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা কাফিরুন এবং সূরা ইখলাস ফজরের সুন্নত এবং মাগরিব পরবর্তী সুন্নতে অধিক পরিমাণে পাঠ করতেন। নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সূরা ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ কুরআনের এক চতুর্থাংশ।”
সূরাটি সকল মুসলিমদের জন্য একটি উদাহরণ যে, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা শত্রুর সাথে এমন কোনো আপস করবে না যা ইসলাম সমর্থন করে না। এবং এমন পরিস্থিতিতে তারা এই সূরার উপদেশ অনুসরণ করবে যা তাদের (অবিশ্বাসীদের) সম্পূর্ণভাবে হতাশ করবে।
অবতীর্ণের সময় ও স্থান
সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটির বিষয়বস্তু এবং ঘটনাবলী স্থান, সময় ও পরিস্থিতিকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়। ইসলামের উত্থানের প্রারম্ভিক সময়ে এটি অবতীর্ণ হয়েছিল, যখন অবিশ্বাসীদের সংখ্যা মুসলমানদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল এবং মুহাম্মদ (সা.) তীব্র চাপের মধ্যে ছিলেন। অবিশ্বাসীরা তাঁকে তাদের ধর্ম (মূর্তিপূজা ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড) গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি দ্বিধাহীনভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তাদের হতাশ করেছিলেন।
শানে নুযূল
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, ওলীদ ইবনে মুগীরা, আস ইবনে ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবনে আবুদল মোত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খলফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, “আসুন, আমরা পরস্পরের মধ্যে এই শান্তি চুক্তি করি যে, এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের এবাদত করব।
তাবরানীর রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, কাফেররা প্রথমে পারস্পরিক শান্তির স্বার্থে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে এই প্রস্তাব রাখল যে, “আমরা আপনাকে বিপুল পরিমাণে ধন-সম্পদ দেব, ফলে আপনি মক্কার সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি হয়ে যাবেন। আপনি যে মহিলাকে ইচ্ছা বিবাহ করতে পারবেন। বিনিময়ে শুধু আমাদের উপাস্যদেরকে মন্দ বলবেন না। যদি আপনি এটাও মেনে না নেন, তবে এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের এবাদত করব এবং এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন।
আবু সালেহের রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “মক্কার কাফেররা পারস্পরিক শান্তির লক্ষ্যে এই প্রস্তাব দিল যে, ‘আপনি আমাদের কোন প্রতিমার গায়ে কেবল হাত লাগিয়ে দিন, আমরা আপনাকে সত্য বলব।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে জিবরাঈল (আ.) সূরা কাফিরূন নিয়ে আগমন করলেন। এতে কাফেরদের ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ এবং আল্লাহ তা’আলার একনিষ্ঠ এবাদতের আদেশ রয়েছে।”
বিষয়বস্তুর বিবরণ
এখানে শুধুমাত্র সেই সব কাফেরদেরকেই বিশেষভাবে বোঝানো হয়েছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জানতেন যে, তাদের কাফেররা মহানবী -এর কাছে যখন (নিরপেক্ষ সন্ধি) প্রস্তাব রাখল যে, এক বছর আমরা তোমার উপাস্যের ইবাদত করব এবং এক বছর তুমি আমাদের উপাস্যের ইবাদত করবে। প্রতি উত্তর ছিল, এটা কখনই সম্ভব নয় যে, আমি তাওহীদের পথ পরিত্যাগ করে শিরকের পথ অবলম্বন করে নেব; যেমন তোমরা চাচ্ছ। আর যদি আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে হিদায়াত না লিখে থাকেন, তাহলে তোমরাও তাওহীদ ও আল্লাহর উপাসনা থেকে বঞ্চিতই থাকবে।
যদি তোমরা তোমাদের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাক এবং তা ত্যাগ করতে রাজী না হও, তাহলে আমিও নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, তা কেন ত্যাগ করব? (لَناَ أَعْمَالُناَ وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ) অর্থাৎ, আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। (আল ক্বাস্বাস ৫৫ আয়াত) (তাছাড়া তোমাদের কর্ম ভ্রষ্ট এবং আমার কর্ম শ্রেষ্ঠ। আর অন্যায়ের সাথে কোন আপোস নেই।)