সাইয়েদুল ইস্তেগফার ক্ষমা প্রার্থনার দো‘আ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার ক্ষমা প্রার্থনার দো‘আ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার (Sayyidul Istighfar): হাদিসে অসংখ্য ইস্তেগফার বা ক্ষমার দো‘আ পাওয়া যায়। কিন্তু সব ইস্তেগফারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হল সাইয়েদুল ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ আল্লাহ্পাক আমাদেরকে সকল সমস্যার সমাধান দেখিয়েছেন যে আমলের মাধ্যমে তা হল ইস্তেগফার। শুধু সমস্যার সমাধন নয় বরং ইস্তেগফার করার মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাদের অনেক আকর্ষণীয় পুরুষ্কার দান করবেন। আল্লাহর নবী নূহ (আ) তার জাতিকে বলেছিলেন যে, তোমরা ইস্তেগফার করো তোমাদের রবের কাছে , তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি?

সাইয়েদুল ইস্তেগফার হল আল্লাহর দরবারের ক্ষমা চাওয়ার একটি শ্রেষ্ট দোয়া। استغفار‎‎ বা ইস্তিগফার অর্থ হলো ক্ষমা চাওয়া।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার Bangla উচ্চারণ

হাদিসে অসংখ্য ইস্তেগফার বা ক্ষমার দো‘আ পাওয়া যায়। কিন্তু সব ইস্তেগফারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হল সাইয়েদুল ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ। নিচে সাইয়েদুল ইস্তেগফারের আরবি-অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলঃ

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।

সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ঘটনা ও ইতিহাস

হাসান বসরী রাহ. এর কাছে একবার এক ব্যক্তি জানালো “ তার ফসলে খরা লেগেছে। তাকে যেনো কোন আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন নিয়মিত এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর অন্য আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি অনেক গরীব। আমাকে কিছু রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন নিয়মিত এস্তেগফার করো।

এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হওয়ার আমল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, নিয়মিত এস্তেগফার করো।” সেখানে উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “ হুজুর সবাইকে একই পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ.তখন বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার পবিত্র কুরআনে শিখিয়েছে। তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)

নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে নিয়মিত এস্তেগফার করো। (ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অনেক ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপরে অজস্র বারিধারা ও রহমত বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)

যারা পেরেশানি মধ্যে আছেন, হতাশার মধ্যে আছেন, ডিপ্রেশনে আছেন, sadness, loneliness ইত্যাদি না্নান সমস্যার সম্মুখীন আছেন, তারা নিয়মিত এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম হচ্ছে, দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফার করা বা নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেওয়া। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন।

সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম

এবার আসুন দেখে নেই সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম, বা কিভাবে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়বেন। যেহেতু এটি একটা দোয়া তাই আপনি যখন ইচ্ছা ফরজ নামাজের শেষে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়তে পারবেন। তাছাড়া সাধারণত এই দোয়া পড়া হয়।

  • সকালের ফজরের নামাজের শেষে।
  • বিকালে আসরের নামাজের শেষে।
  • এছাড়া দিন রাত যখন খুশি এই দোয়া পড়তে পারবেন।

সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ফযীলত

এতোক্ষণ আমরা জানলাম সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি, ইতিহাস, পড়ার নিয়ম। তাহলে চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক এই দোয়ার ফযীলত কি, কেনো এই দোয়াকে ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়।

  • হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
  • হতাশা, মানসিক কষ্ট, মন খারাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই দোয়ার ফলে।
  • যাদের বিয়ে হচ্ছে না, বা যাদের সন্তান হচ্ছে না তারা এই দোয়া বেশি বেশি পড়তে পারেন।
  • যাদের অভাব অনটন লেগেই আছে তারা বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করবেন।

সুতরাং আমাদের উচিত বেশি বেশি ইস্তেগফার করা এবং অন্যদেরকেও ইস্তেগফার করার উপদেশ দেওয়া।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply