আসসালামু আলাইকুম , আজ আমি আলোচনা করবো মাশাআল্লাহ অর্থ কি (MashaAllah ortho ki) এবং এর ফজিলত সম্পর্কে কারণ এই শব্দটি আমরা মুসলিম জাতি হিসাবে প্রতিনিয়ত চলার পথে মাশাআল্লাহ বলে থাকি কিন্তু আমরা অনেকেই এর অর্থ জানি না। তাই আজ আমি মাশাআল্লাহ অর্থ কি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
মাশাআল্লাহ’ একটি দোয়া জাতীয় বাক্য। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা যা চান।’ কোনো ভালো জিনিস, পার্থিব লাভ, ধন-সম্পত্তি অর্জন ও উন্নতির পর এটি বলা হয়। এজন্য যখন কেউ অন্যের ভালো কোনো বিষয় ও উন্নতি দেখবেন তখন তার উচিত ‘মাশাআল্লাহ’ বলা। এর মাধ্যমে ওই জিনিসটি অন্যের দৃষ্টিদোষ থেকে রক্ষা পায়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ভালো কিছু দেখলে ‘মাশাআল্লাহ’ বলার কথা বলেছেন। ভালো কিছু পেলে এর বিনিময়ে ‘মাশাআল্লাহ’ বলার বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা নিজেও পবিত্র কোরআনে শিক্ষা দিয়েছেন। এ নিয়ে পবিত্র কোরআনের সূরা কাহাফের ৩২-৪৩ নম্বর আয়াতে দুই ব্যক্তির ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
কোরআনের ভাষ্য
তুমি তাদের কাছে উপস্থাপন কর দুই ব্যক্তির একটি দৃষ্টান্ত; তাদের একজনকে আমি দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছিলাম এবং সে দুটিকে আমি খেজুরবৃক্ষ দ্বারা বেষ্টন করেছিলাম। আর এই দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র। উভয় বাগানই ফল দান করত এবং এতে কোনো ত্রুটি করত না। আর উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নদী।
তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল। অতঃপর কথাপ্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল, ‘ধনসম্পদে তোমার তুলনায় আমি শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে তোমার তুলনায় আমি বেশি শক্তিশালী।’ এভাবে নিজের প্রতি অত্যাচার করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল।
সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটা কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি না যে,কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই-ই, তাহলে আমি অবশ্যই এটা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তাকে তার বন্ধু বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে ও পরে বীর্য হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মনুষ্য আকৃতিতে?
বহুল প্রচলিত একটি বাক্য- ‘মা শা আল্লাহ’। আরবি- مَا شَاءَ الله ‘মা শা আল্লাহ’- শব্দটির অর্থ হলো- ‘আল্লাহ তাআলা যেমন চেয়েছেন’। কিন্তু ব্যাপক প্রচলিত এ কথাটি কখন এবং কেন বলতে হয়। এটি বলার উপকারিতাই বা কী?
হাদিসে পাকে এসেছে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ কিংবা ভালো যে কোনো কিছু দেখলে বলা-
مَا شَاءَ الله
উচ্চারণ : ‘মা শা আল্লাহ’
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা যেমনটি চেয়েছেন’ (মুসলিম)
‘মা শা আল্লাহ’ কখন বলবেন?
সুন্দর কিছু দেখলে- ‘মা শা আল্লাহ’ বলতে হয়। তবে ইসলামিক স্কলাররা মাশাআল্লাহ বলার তিনটি অবস্থা নির্ধারণ করেছেন। তাহলো-
- যখন কারও সফলতা দেখবেন; তখন- ‘মা শা আল্লাহ’ বলা।
- যখন কাউকে ভালো কিছু করতে দেখবেন; তখন- ‘মা শা আল্লাহ’ বলা।
- যখন কারো কোনো সুন্দর জিনিস দেখবেন; তখন- ‘মা শা আল্লাহ’ বলা।
‘মা শা আল্লাহ’ কেন বলবেন?
কারো সফলতা, ভালো কাজ ও সুন্দর জিনিস দেখে ‘মা শা আল্লাহ’ বলায় কোন বদ নজর লাগে না। বরং মাশা আল্লাহ বলায় রয়েছে বিশেষ উপকার। যে নিজিস বা যে কাজ দেখে ‘মাশাআল্লাহ’ বলা হয়; সে জিনিস বা কাজ থেকে শয়তানের প্রভাব চলে যায়। শয়তান তাতে আর প্রভাব ফেলতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে-
কোনো অতিথি বা মেহমান দাওয়াতে এসে যদি কোনো সুন্দর বাচ্চাকে দেখতে পেয়ে ‘মা শা আল্লাহ’ বলে তবে ওই ব্যক্তির বদনজর থেকে বাচ্চাটি হেফাজত থাকে।
সুন্দর কিছু দেখলে যা বলা যাবে না
অনেকে সুন্দর কোনো কিছু দেখলে বা সুন্দর কোনো বাচ্চা দেখলে সাধারণত- ‘ওয়াও’, ‘কংগ্রাচুলেসন্স’ কিংবা ‘ওয়ান্ডারফুল’ ইত্যাদি আশ্চর্যজনক শব্দ ব্যবহার করেন। না, এমনটি বলায় সুন্দর জিনিসটিতে শয়তান প্রভাব ফেলতে সুযোগ খুঁজে পায়। তাই এ সব শব্দ এড়িয়ে চলুন এবং সুন্নাতের অনুসরণে- ‘মাশাআল্লাহ’ বলুন। এতে শয়তানের আক্রমণ ও বদনজর থেকে কাজটি মুক্ত থাকবে।
‘মা শা আল্লাহ’র উত্তর দেওয়া
কেউ যদি সুন্দর কোনো জিনিস দেখে ‘মা শা আল্লাহ’ বলেন, তবে তার উচিত, এ শব্দ শুনেই মহান আল্লাহর প্রশংসায় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। তাহলে উভয়ের প্রশংসা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও বরকতময় হয় এবং দুনিয়ার যাবতীয় ক্ষতি থেকে বিষয় বা উপলক্ষ্যটি মুক্তি পায়।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সুন্দর কিংবা প্রশংসামূলক কোনো কিছু দেখলে ‘মা শা আল্লাহ’ বলা। আর কাউকে ‘মা শা আল্লাহ’ বলতে শুনলে আল্লাহর প্রশংসায় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর কিছু দেখলে কিংবা প্রশংসামূলক কাজে ‘মা শা আল্লাহ’ বলার তাওফিক দান করুন। আর যারা ‘মা শা আল্লাহ’ শুনবেন তাদের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার তাওফিক দান করুন। আমিন।