ঋণ মুক্তির দোয়া

ঋণ মুক্তির দোয়া

আসছালামু আলাইকুম? সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আজকে আমরা আপনাদের ঋণ মুক্তির দোয়া ও বাংলা অনুবাদ শেয়ার করবো ,আশা করি শেষ পর্যন্ত থাকবেন তা হলে শুরু করা যাক।

ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া ও আমাল

মানুষের একার পক্ষে সবসময় নিজের সব প্রয়োজন পূরণ সম্ভব করা হয় না। মাঝে মাঝে একে অন্যকে সাহায্য করতে হয়। এই সাহায্য নানান ধরনের ও অনেক অনৈতিকতার কারণ হয়। এজন্য বান্দার কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাওয়া এবং দুআ করা, তিনি যেন ঋণ ছাড়াই সব প্রয়োজন পূরণ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাইতেন।

ঋণ মুক্তির দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো পেরেসানি অনুভব করতেন, তখনই এ দোয়া পড়তেন- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ অর্থ : হে আমার পালনকর্তা ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আমার সকল দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আশ্রয় চাই, আমার অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, আমার কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই এবং আমার ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে আশ্রয় চাই। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া :

  • সুনির্দিষ্ট চাহিদা মেটানোর প্রয়োজন এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধের ইচ্ছা ছাড়া ঋণ না নেওয়া।
    মাসিক আয় ও ব্যয়ের মাঝে সমন্বয় করে চলা।
  • সমাজে নামডাক, কৃত্রিম লোক দেখানো ও রসম – রেওয়া্জের জন্য ব্যয় করা ঠেকে দূরে থাকা।
  • যেসব কাজ জানমালে বারাকাহ তা গুরুত্বের সাথে করা।
  • হারাম আয়ের পথ বর্জন করা।
  • হালাল আয়ের পথে জীবন–জীবিকা নির্বাহ করা।আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য, ঋণ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রেও পরস্পরকে সাহায্য করা:

পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে কাউকে ঋণগ্রহণের দিকে অনুপ্রাণিত না করা। এটিও সাহায্যের একটি বড় উপায়।আমি যখন মেরাজে গিয়েছিলাম, তখন বেহেশতের দরজার ওপর লেখা দেখেছি, খয়রাতের সওয়াব ১০ গুণ, আর কর্জে হাসানার সওয়াব ১৮ গুণ। দান বা খয়রাত ফেরত দিতে হয় না কিন্তু কর্জে হাসানা ফেরত দিতে হয়। কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণ ফেরত দেয়ার পরেও দ্বিগুন মাত্রায় সওয়াব পাওয়া যাবে। মূলত পবিত্র কোরআনে আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মুসলমানরা, তালির ওপর তালিযুদ্ধ ছিন্নবস্ত্র পরিধান করা, ঋণ গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম। যদি তা শোধ করার শক্তি না থাকে। (মুসনাদ আহমাদ)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুসলমানরা ঋণ গ্রহণ থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ঋণ রাত্রীকালে মর্ম বেদনা ও দুঃশ্চিন্তা সৃষ্টি করে এবং দিনের বেলায় অপমান ও লাঞ্চনায় লিপ্ত করে। (বায়হাকি) অনেকে আছেন ব্যাংক থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ নিয়ে বেমালুম হজম করেন। তাদের পরিচয় ঋণখেলাপি। অথচ অনেকে শখের বশে ব্যবসায়ের খাতে ঋণ নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তাদের জন্য রাসূল (সা.) এর সতর্কবাণী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.) এর একটি দীর্ঘ হাদিস রাসূলুল্লাহ (সা.) ঋণ সম্পর্কে বলেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি কোনো ব্যক্তি জিহাদে শহীদ হয়ে যায়, জীবিত হয়ে (পুনরায়) শহীদ হয়ে যায় আবার জীবিত হয়ে (তৃতীয়বার) শহীদ হয়ে যায়, তার জিম্মায় কারও ঋণ প্রাপ্য থাকলে সে জান্নাতে যাবে না, যে পর্যন্ত তার ঋণ শোধ করা না হয়। (নাসায়ি, তিবরানি, হাকেম)

তবে রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধ করার ইচ্ছা রাখে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ শোধ করে দেবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঋণ শোধ করার ইচ্ছা রাখে না এবং এ অবস্থায় মারা যায়, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি বোধ হয় মনে করেছিলে, আমি আমার বান্দার হক তোমার কাছ থেকে আদায় করব না। এরপর ঋণ গ্রহীতার কিছু সৎকর্ম ঋণ দাতাকে দেয়া হবে। সে যদি কোনো সৎকর্ম না করে থাকে, তবে ঋণদাতার কিছু গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (তিবরানি, হাকেম)।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা :

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তো অবশ্যই, চেষ্টা করা, তার আগেই পরিশোধ করার। টালবাহানা, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা ওয়াদার তো প্রশ্নই আসে না। এধরনের আচরণ তো যে কারো সাথেই না-জায়েয। আর যে বিপদে ঋণ দিয়ে অনুগ্রহ করেছে তার সাথে তো আরো ভয়াবহ। বস্তুত সামর্থ্য সত্ত্বেও এরূপ আচরণ খুবই অন্যায়। হাদীসে এসেছে, বিত্তবানের টালবাহানা জুলুম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪০০

ঋণ পরিশোধ ছাড়া অন্য কোনো শর্তারোপ করতে পারে না। -মুয়াত্তা মালেক ২/২১৫

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এ দুআ করতেন اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِالمَحْيَا وَفِتْنَةِ المَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ المَأْثَمِ وَالمَغْرَمِ .

অর্থাৎ, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। মাছীহ দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। জীবনের ফেতনা ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে গোনাহ ও ঋণ থেকে আশ্রয় চাইকেউ (অন্য বর্ণনায় আছে বর্ণনাকারী নিজেই) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি ঋণ থেকে এত বেশি আশ্রয় চান! তিনি বললেন, মানুষ যখন ঋণগ্রস্ত হয় তখন কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৩২

সুদখোরদের অভ্যাস হচ্ছে, খাতক নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধে সক্ষম না হলে সুদের অঙ্ক আসলের সঙ্গে যোগ করে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের কারবার চালানো। উপরন্তু সুদের হারও আগের চেয়ে বাড়িয়ে দেয়া। সদকা বিষয়ে পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সদকা বা দান ইসলামে সৎকর্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর চেয়েও উত্তম হচ্ছে কর্জে হাসানা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করে বলেন, مَّن ذَا الَّذِى يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضٰعِفَهُۥ لَهُۥ وَلَهُۥٓ أَجْرٌ كَرِيمٌ

ঋণদাতা তাগাদা দিতে এসে কিছু অশোভনীয় আচরণে করণীয় :

عَنْ كَعْبٍ، أَنَّهُ تَقَاضَى ابْنَ أَبِي حَدْرَدٍ دَيْنًا كَانَ لَهُ عَلَيْهِ فِي الْمَسْجِدِ، فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا حَتَّى سَمِعَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ فِي بَيْتِهِ، فَخَرَجَ إِلَيْهِمَا حَتَّى كَشَفَ سِجْفَ حُجْرَتِهِ فَنَادَى ‏”‏ يَا كَعْبُ ‏”‌‏.‏ قَالَ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ قَالَ ‏”‏ ضَعْ مِنْ دَيْنِكَ هَذَا ‏”‌‏.‏ وَأَوْمَأَ إِلَيْهِ أَىِ الشَّطْرَ قَالَ لَقَدْ فَعَلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ قَالَ ‏”‏ قُمْ فَاقْضِهِ

কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি মসজিদের ভিতরে ইব্‌নু আবূ হাদরাহ (রহঃ)এর নিকট তাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চৈঃস্বরে কথাবার্তা হলো। এমনকি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘর হতেই তাদের কথার আওয়ায শুনলেন এবং তিনি পর্দা সরিয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কা’ব! কা’ব (রাঃ) উত্তর দিলেন, লাব্বায়েক রাসূলাল্লাহ্‌! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার পাওনা ঋণ হতে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইঙ্গিত করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আমি তাই করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তখন তিনি ইব্‌নু আবূ হাদরাদকে বললেনঃ উঠ আর বাকীটা দিয়ে দাও। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৫৭)

যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ বা অভাবী ব্যক্তিকে সহযোগিতা করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে সহযোগিতা দান করবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করবেন। (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব, হাদিস নং ৬৯) ইসলামের দৃষ্টিতে এই করজে হাসানার উপকারিতা অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সময় তাঁর প্রিয় সাহাবিদের করজে হাসানার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।

পুরো আর্টিকেল সাথে থেকে পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply